ভূমিকা
বয়ঃসন্ধি কালে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের নিজেদের যেমন কোন ধারনা থাকেনা – অন্যদিকে মা বাবারা ও বুঝতে পারেননা তাদের কি করা উচিৎ। মা বাবার কাছে মনে হতে পারে তাদের সন্তান যেন কেমন অপরিচিত মানুষের মত আচরণ করছে। সন্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ যেন ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে। পিতা মাতারা অনেক ক্ষেত্রেই ঘাবড়ে যান, বুঝতে পারেন না কি করবেন। অন্যদিকে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেকসময় মা বাবার সঙ্গে একধরনের দূরত্ব তৈরি করে ফেলে, সমবয়সী বা বন্ধু- বান্ধবদের সঙ্গে বেশী সময় কাটাতে পছন্দ করে। এই সময়টা পিতা মাতা ও কিশোরদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর। কিশোর সন্তান ও বাবা মায়ের মধ্যে মানসিক এই দূরত্ব এই সমটায় স্বাভাবিক একটা ব্যাপার – এই দূরত্ব উটতি বয়সের ছেমে-মেয়েদের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
স্পর্শকাতর এই সময়টাতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মা বাবার সুসম্পর্ক সন্তানের শিক্ষা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। অন্যদিকে, মাতাপিতা ও সন্তানদের মধ্যে দুর্বল ও সংঘাত পূর্ণ পারষ্পরিক সম্পর্ক উটতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মাদক অশক্তি ও সহিংসতার পথে ঠেলে দিতে পারে।
প্যারেন্টিং এর অপরিহার্য কিছু টিপস নিচে আলোচনা করা হলোঃ
মা বাবা হিসাবে দায়িত্ববোধ ও সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
টিন এজ বয়সে মানসিক নিরাপত্তা, বাবা মায়ের নিঃশর্ত ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রতিটি কিশোর কিশোরীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ – মা বাবাকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পিতা মাতা হিসাবে নিজেদের অবস্থানগত সুবিধার অপব্যাবহার না করে ছেলেমেয়েদের আংশিক স্বাধীনতা দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ফলে ছেমেমেয়েদেরও বাবা মায়ের সাথে মন খুলে কথা বলার মত পরিবেশ তৈরি হয়। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও বেড়ে যায় নিজেদের মধ্যে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে গিয়ে সন্তানদের কাছে নিজেদের সন্মান কমে যাওয়ার আশংকা করেন অনেক মা বাবা যা একেবারেই অমূলক। নিজের ছেলেমেয়েদের প্রতি বাবা মায়ের সত্যতা, সম্মান ও বিবেচনাবোধকে সন্তানেরাও সমভাবে সন্মানের চোখে দেখে থাকে। কিন্তু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মানে এটা নয় যে আপনাকে ছেলেমেয়েদের সকল কথাতেই সূর মেলাতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে দৃঢ় মনোভাব প্রদর্শন ও সীমা নির্ধারন করে দেয়াটা খুবই জরুরী। নিজেদের দৃঢ় মনোভাব ও অবস্থান বজায় রেখে মঝে মধ্যে না বলতে শিখুন। আপনার সন্তান কাদের সাথে মেলামেশা করছে সেদিকে নজর রাখা খুবই দরকার এই সময়টাতে।
সন্তানের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানো ও অর্থবহ যোগাযোগ স্থাপন
প্রতিদিনই নিজের সন্তানের খোঁজখবর নিন। ডিনারের পর বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে কিছু সময় কাটান ও খোলামেলা কথাবার্তা বলুন, তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ কোন কাজ একসাথে করুন – সেটা আইসক্রিম খাওয়াই হোক বা কোথাও বেড়াতে যাওয়াই হোক। ছেলেমেয়েরা বড়ো হচ্ছে, তাদের স্বাধীনতার ব্যাপারটা মাথায় রেখে একদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে তারা কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে – অন্যদিকে মেলামেশা করতে বাড়ন করা যাবেনা সরাসরি। আপানর ছেলে বা মেয়ের বন্ধু-বান্ধবীদের মাঝেমধ্যে বাসায় দাওয়াত দিতে পারেন। আপনার সন্তানের বন্ধু-বান্ধবীরা তাদের মা বাবার সাথে কি ধরনের আচরণ করে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ তৈরি হবে এতে করে। তাদের বন্ধু-বান্ধবীরা কেমন সে সম্পর্কেও ভাল ধারনা পাবেন।
সন্তানের পূর্ণ বিকাশে মা বাবার ভূমিকা
সন্তানেরা আপনাদের মাধ্যমে এই দুনিয়াতে আসলেও সবসময়ই মনে রাখতে হবে তারা আপনার সম্পত্তি না। আপনাদের মাধ্যমে তারা দুনিয়াতে এসেছে এটা আপনার জন্য একটি বিশেষ সুবিধা বা অধিকার (privilege) – এই অধিকারকে উপভোগ করুন কিন্তু তাদের উপর নিজেদের ধ্যান ধারনা চাপিয়ে দিতে যাবেন না। ছেলে মেয়েদের সর্বোচ্চ বিকাশের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র বা পরিবেশ প্রস্তুত করে দেয়াই মা বাবার মুল দায়িত্ব – শেখানেই সীমাবদ্ধ থাকুন। সন্তান কে সাহায্য করুন যাতে তারা নিজেদের আত্ম পরিচয়, ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারে ও নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারে।
ছেলেমেয়েরা নিজেদের মা বাকে রোল মডেল হিসাবে মনে করে ও অনুসরণ করে – কাজাই পিতামাতাকে সতর্ক থাকতে হবে নিজেদের চরিত্রের খারাপ প্রভাব যেন সন্তানের উপর না পরে। নিজেদের কাজ নিজেদেরকে করতে ছেলেমেয়েদের অনুপ্রাণিত করুন তাতে করে দায়িত্ববোধ বিকশিত হবে। দাম্পত্য কলহ সন্তানের উপর অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যদি তারা দেখে যে, তাদের মা বাবা প্রতিনিয়তই তাদের চোখের সামনে ঝগড়া করছে। অনেক সময় বাবা মা অজ্ঞতা বশত সন্তানদেরকে অতিরিক্ত আগলে রাখার চেষ্টা করে তাতে করে হিতে বিপরীত হয়, ছেলেমেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। পিতামাতারা আরেকটি অত্যন্ত ক্ষতিকর কাজ নিজেদের অজান্তে করে ফেলেন – তা হলো নিজের সন্তান কে অন্যদের সাথে তুলনা করা। তারা ভুলে যান যে প্রতিটি মানুষ স্বতন্ত্র, সকলের চিন্তা, মনন ও জীবনবোধ সবই আলাদা। নিজের সন্তানকে কখনও অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে তুলনা করবেন না, তাদেরকে স্বকীয়তা নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন।
উপসংহার
প্যারেন্টিং এর কোন টিপসই আপনাকে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে আপনার সন্তান আপানর মনের মত করে গড়ে উঠবে। তবে উপরে উল্লেখিত টিপসগুলোর সফল প্রয়োগ আপানর সন্তানের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পরিশেষে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই – তা হলো সন্তানের সব আবদার পূরণ করতে যাবেন না, যা চায় তাই সবসময় কিনে দিবেন না। আবদার নয় সবকিছুই তাকে কষ্টকরে অর্জন করতে হবে – এই তাগিদ ও দায়িত্ববোধ তার মধ্যে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করুন। আর তা যদি করতে বার্থ হন তাহলে আপনার সন্তান অহংকারী, স্বার্থপর ও উন্নাসিক হিসাবে বেড়ে উঠার ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। তখন অবাক হলেও করার থাকবে না কিছুই।
Md. Ziaur Rahman is an SEO Consultant, software engineer, blogger, author, and psychology enthusiast.
Founder & CEO
BD Coast Solutions
Sources:
- Davis, J., 2022. 10 Parenting Tips for Raising Teenagers. [online] WebMD. Available at: <https://www.webmd.com/parenting/features/10-parenting-tips-for-raising-teenagers> [Accessed 28 May 2022].
- 2022. [online] Available at: <https://www.ahaparenting.com/read/parenting-teens> [Accessed 28 May 2022].